সেন্সর

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | | NCTB BOOK

সেন্সর হলো একটি ডিভাইস যা পরিবেশ বা কোন সিস্টেম থেকে শারীরিক, রাসায়নিক, বা জৈবিক তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই তথ্যকে বৈদ্যুতিক সংকেত বা ডিজিটাল তথ্য হিসেবে রূপান্তর করে। সেন্সরগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন স্বয়ংচালিত যানবাহন, স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, এবং রোবোটিক্স।

সেন্সরের মূল কাজ:

সেন্সরের প্রধান কাজ হলো নির্দিষ্ট একটি ফিজিক্যাল পরিমাপকে (যেমন তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, আলো, গতি) শনাক্ত করা এবং সেই তথ্যকে একটি বৈদ্যুতিক সংকেত বা ডিজিটাল আউটপুটে রূপান্তর করা।

সেন্সরের প্রকারভেদ:

সেন্সর অনেক ধরনের হতে পারে, এবং এগুলি বিভিন্ন পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয়। কিছু সাধারণ সেন্সরের প্রকারভেদ নিচে দেওয়া হলো:

১. তাপমাত্রা সেন্সর (Temperature Sensor):

  • তাপমাত্রা সেন্সর পরিবেশ বা কোন নির্দিষ্ট বস্তু বা স্থানের তাপমাত্রা পরিমাপ করে। উদাহরণস্বরূপ, থার্মোকাপল এবং থার্মিস্টর।
  • এটি সাধারণত এয়ার কন্ডিশনার, হিটার, এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।

২. আলো সেন্সর (Light Sensor):

  • আলো সেন্সর আলোর পরিমাণ শনাক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, LDR (Light Dependent Resistor) এবং ফটোডায়োড।
  • এটি সাধারণত স্ট্রিট লাইট, স্মার্টফোনের অটোমেটিক ব্রাইটনেস কন্ট্রোল এবং ক্যামেরায় ব্যবহৃত হয়।

৩. আর্দ্রতা সেন্সর (Humidity Sensor):

  • আর্দ্রতা সেন্সর পরিবেশের আর্দ্রতা পরিমাপ করে। উদাহরণস্বরূপ, ক্যাপাসিটিভ হিউমিডিটি সেন্সর।
  • এটি এয়ার কন্ডিশনার, গ্রিনহাউজ, এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়।

৪. প্রক্সিমিটি সেন্সর (Proximity Sensor):

  • এটি কাছাকাছি আসা বস্তু বা অবজেক্টের অবস্থান নির্ধারণ করে। এটি সাধারণত ইনফ্রারেড বা আল্ট্রাসোনিক সিগন্যাল ব্যবহার করে কাজ করে।
  • প্রক্সিমিটি সেন্সর মোবাইল ফোনের অটোমেটিক স্ক্রিন লক সিস্টেম, রোবটিক আর্ম, এবং স্বয়ংচালিত গাড়ির জন্য ব্যবহৃত হয়।

৫. মোশন সেন্সর (Motion Sensor):

  • মোশন সেন্সর গতি শনাক্ত করে এবং তার উপর ভিত্তি করে সংকেত প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, প্যাসিভ ইনফ্রারেড (PIR) সেন্সর।
  • এটি নিরাপত্তা সিস্টেম, স্বয়ংক্রিয় দরজা, এবং হালকা কন্ট্রোল সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।

৬. গ্যাস সেন্সর (Gas Sensor):

  • গ্যাস সেন্সর বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের উপস্থিতি বা ঘনত্ব শনাক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, কার্বন মনোক্সাইড বা মিথেন গ্যাস শনাক্ত করতে MQ সিরিজ সেন্সর।
  • এটি শিল্প, আবাসিক সুরক্ষা এবং পরিবেশ পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়।

৭. পাইজোইলেকট্রিক সেন্সর (Piezoelectric Sensor):

  • এটি চাপ বা কম্পন শনাক্ত করে এবং তার উপর ভিত্তি করে বৈদ্যুতিক সংকেত উৎপন্ন করে।
  • এটি মাইক্রোফোন, কম্পন পর্যবেক্ষণ যন্ত্র, এবং গিটার পিকআপে ব্যবহৃত হয়।

৮. প্রেসার সেন্সর (Pressure Sensor):

  • প্রেসার সেন্সর চাপ বা শক্তি শনাক্ত করে। এটি হাইড্রোলিক এবং প্নিউমেটিক সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
  • এটি অটোমোবাইল, উড়োজাহাজ এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।

৯. ম্যাগনেটিক সেন্সর (Magnetic Sensor):

  • ম্যাগনেটিক সেন্সর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের পরিবর্তন বা উপস্থিতি শনাক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, হল ইফেক্ট সেন্সর।
  • এটি কম্পাস, অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম (ABS), এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।

সেন্সরের ব্যবহার:

সেন্সর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন:

১. স্বয়ংচালিত যানবাহন: সেন্সর গাড়ির নিরাপত্তা এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। যেমন, এয়ারব্যাগ সেন্সর, টায়ারের প্রেসার সেন্সর, এবং গাড়ির ব্যাটারি মনিটরিং। ২. স্বাস্থ্যসেবা: হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, এবং শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে সেন্সর ব্যবহার করা হয়। ৩. পরিবেশ পর্যবেক্ষণ: সেন্সর পরিবেশগত তথ্য, যেমন তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, এবং দূষণ শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। ৪. গৃহস্থালি এবং স্মার্ট হোম: স্মার্ট হোম ডিভাইসে, যেমন স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট, স্মার্ট লাইট এবং নিরাপত্তা ক্যামেরায় সেন্সর ব্যবহার করা হয়।

সারসংক্ষেপ:

সেন্সর হলো এমন ডিভাইস যা বিভিন্ন ফিজিক্যাল, রাসায়নিক, বা জৈবিক পরিমাপ শনাক্ত করে এবং তা বৈদ্যুতিক সংকেত হিসেবে রূপান্তর করে। সেন্সরের ধরন ও ব্যবহার অনেক বৈচিত্র্যময়, যা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন যানবাহন, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ, এবং নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Content added By
Content updated By
Promotion